বীর্য পাতলা হলে করণীয় কি?

শীঘ্র পতন

সারাংশ

দ্রুত বীর্যপাত  একটি যৌন অসুবিধা যেখানে একজন পুরুষ  তার পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তা বজায় রাখতে অক্ষম। যার ফলে যৌন কাজ শুরুর  এক মিনিটের বা তার পূর্বেই  বীর্য স্খালন হয়ে যায়। আর এই অবস্থা মানুষকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করে । যার ফলে সঙ্গিনীর সাথে  নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। শারীরিক-মানসিক সহ আরো কিছু কারণে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।  বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করার মাধ্যমে এই সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব যেমন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ওষুধপত্র ইত্যাদি করার মাধ্যমে। যাদের সমস্যা একটু বেশি তাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সন্তান জন্মদানের বাধা সৃষ্টি হতে পারে। চিকিৎসার সাহায্যে শীঘ্র পতনের সমস্যার সফল সমাধান করা যায়।



দ্রুত বীর্যপাতের  উপসর্গ-Symptoms of Premature Ejaculation

 চিকিৎসা বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে আপনার যদি নিম্নের  উপসর্গগুলো দেখা দেয় তবে আপনার এই সমস্যা আছে। 

১. যৌনিতে  প্রবেশের এক মিনিটের মধ্যে বীর্যপাত হওয়া। 

২. অধিক সময় ধরে এই সমস্যা হওয়া। 

৩. কোন মানসিক বা শারীরিক রোগের কারনে এই সমস্যা হওয়া। 

৪. অতীতে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং কোন ওষুধ ব্যবহারের ফলে এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। 

দ্রুত বীর্যপাত  এর চিকিৎসা - Treatment of Premature Ejaculation

দ্রুত বীর্যপাত এর চিকিৎসার মধ্যে বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি লাইভ স্টাইল পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব

  • পরামর্শদান এবং যৌন থেরাপি
    আপনার যৌন জীবনের সমস্যাগুলি নিয়ে আপনার পরামর্শদাতার সঙ্গে খোলামেলা এবং সৎ ভাবে আলোচনা করুন। আপনার ডাক্তারবাবু বা পরামর্শদাতা আপনাকে বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যাপারে জানাবেন যাতে আপনার কর্মক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ এবং পাশাপাশি চাপ কমে যায়। যৌন চিকিৎসা এবং পরামর্শদান দুই জন সঙ্গীর মধ্যের সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনে।
  • ওষুধ পত্র
    বিলম্বে বীর্যপাতে সাহায্য করতে বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এই গুলির মধ্যে রয়েছে এন্টিডিপ্রেসান্ট, এনালজেসিক এবং ফসফোডাইএস্টারেজ-5 ইনহিবিটারস। এই ওষুধগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে বীর্যপাত হতে দেরি হওয়া (যদিও এই ওষুধগুলি এই কাজের জন্য এফ-ডি-এ দ্বারা অনুমোদিত নয়)। আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তারবাবু শুধু এই ওষুধগুলি অথবা এর সাথে অন্য ওষুধ দিতে পারেন। নিজে নিজে ওষুধ নিলে স্বাস্থ্যের গুরুতর সমস্যা হতে পারে, কাজেই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ নেবেন না।
  • আচরণগত কৌশলগুলি
    সরল কিছু ব্যবহারিক পরিবর্তন করে অনেকের শীঘ্র পতনের চিকিৎসা করা যায়। আপনার যৌন সঙ্গম  ক্ষমতার উপর থেকে চাপ সরিয়ে এনে সঙ্গম এড়িয়ে যৌন ঘনিষ্ঠতার অন্যান্য উপায়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে আপনার ব্যাপকভাবে সাহায্য হতে পারে। আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করার জন্য অন্যান্য উপায় সুপারিশ করতে পারেন।
  • সাময়িক অনুভূতি-নাশক ওষুধ
    পুরুষাঙ্গকে অসাড় করে দিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজন কমিয়ে দিতে আপনার ডাক্তারবাবু অনুভূতি-নাশক মলম এবং স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন। এতে বীর্যপাত নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এই ওষুধগুলি মিলনের 10 থেকে 15 মিনিট আগে ব্যবহার করতে হবে। এর কোনটি সহজেই দোকানে কিনতে পারবেন, কোনটির আবার ডাক্তারবাবুর প্রেসক্রিপশান লাগবে। যদিও এইগুলির প্রায় সব কয়টি ওষুধই শীঘ্র বীর্যপাতের ব্যাপারে সাহায্য করে, তবে কিছু কিছু প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে এইগুলির ব্যবহারে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে অনুভূতি এবং মিলনের আনন্দ খুবই কমে যায়।
  • ব্যায়াম
    পেলভিক ফ্লোরের পেশীগুলি দুর্বল হলে শীঘ্র বীর্যপাত হয়ে যাবে। তাই এই পেশীগুলির ব্যায়াম করলে বীর্যপাত দেরিতে হবে।
    • সঠিক পেশী সনাক্ত করুন
      সঠিকভাবে জড়িত পেশীগুলি সনাক্ত করতে মধ্য পথে প্রস্রাব বন্ধ করুন। এই কাজে জড়িত পেশীটিই বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণ করে। যে পেশীগুলি আপনাকে অসময়ে বায়ু ত্যাগ বন্ধ করতে সাহায্য করে সেগুলিও এই কাজে জড়িত।
    • পেশীগুলিকে প্রশিক্ষণ দিন
       আপনার পেলভিক পেশীগুলিকে 3 থেকে 4 সেকেন্ড সংকোচন করুন এবং তারপর শিথিল করুন। এই প্রক্রিয়াটি 4 থেকে 5 বার পুনরাবৃত্তি করুন। যখন আপনার পেশীগুলি শক্তিশালী হয়ে উঠবে, তখন এই ব্যায়াম দিনে তিনবার করুন এবং প্রত্যেকবার 10 বার পুনরাবৃত্তি করুন।
  • বিরতি-সংকোচনের কৌশল
    এই পদ্ধতিতে শীঘ্র বীর্য পতন বন্ধ করতে পারা যায়। যথা বিধি পূর্বরাগ শুরু করুন। যখন আপনার মনে হবে যে আপনি পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তা এবং বীর্যপাত আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, তখন আপনার সঙ্গিনীকে বলুন আপনার পুরুষাঙ্গের মাথার ঠিক নিচে কয়েক সেকেন্ডের জন্য চেপে ধরতে। এতে বীর্যপাতের ইচ্ছে চলে যাবে। এই প্রক্রিয়া প্রয়োজন মত কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন যতক্ষণ না আপনি বীর্যপাত না করেই সঙ্গিনীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারছেন। ধীরে ধীরে আপনি বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে যাবেন এবং তখন এই পদ্ধতির আর কোন প্রয়োজন থাকবে না।
  • কনডমের ব্যবহার
    মোটা বস্তুতে তৈরি কনডমগুলি পুরুষাঙ্গের অনুভূতি দেরিতে আনে, ফলে বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণ/দেরিতে করা যায়। 'ক্লাইম্যাক্স কন্ট্রোল' কনডমগুলি কোন কোন দেশে দোকানেই কিনতে পাওয়া যায়। এই কনডমগুলিতে অসাড়-কারী দ্রব্য দেওয়া থাকে যা অনুভূতি কমিয়ে দেয়।

নিজের যত্ন:

শীঘ্র বীর্যপাত একটি যৌন সম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠতা খারাপ ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।  এই কারণে অংশীদাররা তাদের মধ্যে দূরত্ব এবং চাপ বেড়ে যাওয়া অনুভব করতে পারেন। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে প্রতি 3 জন পুরুষদের মধ্যে 1 জন তার জীবনে কিছু সময়ের জন্য শীঘ্র পতনের অভিজ্ঞতা ভোগ করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ঘটনাগুলি কয়েকবার ঘটে এবং সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায়।

কর্মক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ এবং চাপ সমস্যা আরও খারাপ করতে থাকে। মন এবং শরীরকে শিথিল করে যৌন অভিজ্ঞতা উপভোগ করার চেষ্টা করলে অবস্থার উন্নতি হবে। শীঘ্র বীর্যপাত হয়ে গেলেও চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। মনে রাখবেন, আপনার সঙ্গিনীকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য এবং প্রেমের শিখা জীবিত রাখা এবং অন্তরঙ্গতা অক্ষত রাখার অনেক উপায় রয়েছে। যদি মনে হয় আপনার সাহায্য প্রয়োজন, তাহলে দ্বিধা না করে ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হোন।

জীবনধারার পরিবর্তন

শীঘ্র বীর্যপাতের অনেক কারণ আছে, যার মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক উভয়ই রয়েছ। চাপ এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ অর্জিত অকাল বীর্য পতনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। চাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং আপনার সঙ্গিনীর সাথে খোলাখুলি এবং সৎ আলোচনা করা হচ্ছে এই সমস্যার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের জীবনকে চাপ মুক্ত রাখা এই অবস্থার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দারুণ সহায়তা করতে পারে। জীবন যাপনের পদ্ধতির সাথে সম্প্রীত কয়েকটি অসুখ, যেমন ডায়াবেটিস,  উচ্চ রক্ত চাপ, থাইরয়েডের সমস্যা এবং প্রোস্টেটের গোলমাল এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই অসুখগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে শীঘ্র পতন রোগের চিকিৎসা এবং নিরাময়ে সাহায্য করবে।

Post a Comment

أحدث أقدم